ভারত সরকার দ্বারা ২০২৩ সালের পদ্ম পুরস্কারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এই তালিকায় নাম আছে পশ্চিমবঙ্গের শ্রী দিলীপ মহলানবিশের। কে এই দিলীপ মহলানবিশ? জানুন তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত।
দিলীপ মহলানবিশ
ওআরএস -এর জনক নামে পরিচিত শ্রী দিলীপ মহলানবিশের জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ই নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গে। তিনি পড়াশোনা করেছেন কলকাতা, এবং লন্ডনে। পরবর্তীকালে শ্রী মহলানবিশ কলকাতায় জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর মেডিক্যাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং -এ যোগদান করেন। এখানেই তিনি ওআরএস নিয়ে গবেষণা করেন।
দিলীপ মহলানবিশ ও ওআরএস আবিষ্কার
১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে অগণিত উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করতে শুরু করেন। ভারতে প্রবেশের পর বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে তাদের ঠিকানা হয়। এইসব শিবির গুলিতে শুদ্ধ পানীয় জল এবং স্য়ানিটেশন -এর প্রবল সমস্যা ছিল, এবং এর ফলে কলেরা, ও ডায়েরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।
ভারতের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বনগাঁতে এমনই একটি শিবিরে শ্রী দিলীপ ও তার দল কাজ করছিলো। একদিকে কলেরা, ডায়েরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি, সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত দেখা দিলো যথেষ্ট ইণ্টরা ভেনাস ফ্লুয়িড, এবং প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব।
শ্রী মহলানবিশ তাঁর গবেষণা লদ্ধ জ্ঞান থেকে জানতেন যে এমতবস্থায় মিষ্টি এবং লবণের একটি মিশ্রণ যা কিনা শরীরের জল শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে। তাই তিনি এবং তাঁর দল লবণ এবং গ্লূকোজের মিশ্রণ তৈরি করে বড় বড় পাত্রে তা সংরক্ষণ করতে শুরু করেন, যাতে রুগীরা নিজেরাই এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেলো ডাঃ মহলানবিশের শিবিরে রোগীদের মৃত্যুর হার ৩% নেমে এলো, যেখানে অন্য শিবিরগুলি যেখানে শুধুমাত্র ইণ্টরা ভেনাস ফ্লুয়িড ব্যবহার করা হচ্ছিলো, মৃত্যুর হার ছিল ২০-৩০%।এই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত ধীমান বড়ুয়া ওই শিবিরে আসেন এবং তার পর থেকেই ওআরএস -এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
পরবর্তী কার্যকলাপ
শ্রী মহলানবিশ এরপর ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল অবধি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে কলেরা মোকাবিলায় আফগানিস্তান, মিশর ,এবং ইয়েমেনে কাজ করেন। এরপর আরও কিছুকাল তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে কাজ করেন।
দিলীপ মহলানবিশ – পুরস্কার
১৯৯৪ সালে শ্রী দিলীপ মহলানবিশ রয়েল সুইডিশ একাডেমিতে বিদেশী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে পেডিয়াট্রিক রিসার্চে প্রথম পলিন পুরস্কার পান। এছাড়াও ২০০৬ সালে তিনি প্রিন্স মাহিদল পুরস্কারে ভূষিত হন।
দিলীপ মহলানবিশ মৃত্যু
২০২২ সালের ১৬ই অক্টোবর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইহলোক ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার কোনও উপকারে এসেছে। এই ধরণের আরও তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটিকে সাব্সক্রাইব করুন। এছাড়াও এই পোস্টটিকে অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন।